বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ কেমন যাচ্ছে
প্রকাশ: ২০১৯-০৮-০৬ ১৪:১২:৫৬ || আপডেট: ২০১৯-০৮-০৬ ১৪:১২:৫৬

১৫ আগস্ট ৭৫ শোকাবহ একটি দিন। জাতি দিবসটিকে গভীরভাবে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। বাঙালি জাতির স্থপতি জাতির পিতা বিশ্ব নন্দিত নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দিন স্বপরিবারে নির্মমভাবে কতিপয় বিপদগামী মানুষের হাতে শাহাদাত বরণ করেন।
বাংলার নির্যাতিত নিষ্পেষিত মজলুম মানুষের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু। তার প্রতি জাতির গভীর শ্রদ্ধা ভালোবাসার শেষ নেই। মজলুম জনতার মুক্তির কান্ডারি শহিদ বঙ্গবন্ধু। সবশ্রেণী পেশার মানুষ তাকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রিয় নেতা মহান এ মানুষটিকে সেদিন হত্যার মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ধরনের বিশ্ব নন্দিত নেতাকে হত্যার নজির বিরল।
ছাত্রাবস্থা থেকে বঙ্গবন্ধু দু:খী মেহনতি শোষিত নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলতেন। এ মহান নেতার সঠিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এবং তার পরিবার পরিজনের অবদান এ জাতি কোনোদিন শোধ করতে পারবে না। তাঁর এবং তাঁর পরিবার পরিজনের নিকট জাতি চিরদিন বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে কৃতজ্ঞ থাকবে। তাঁর মহান শহিদ দিবসে আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা থাকল। শোকাহত পরিবার মন্ডলীর প্রতি গভীর ভাবে সমবেদনার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
বঙ্গবন্ধুর পরিচয়, তাঁর জীবন চরিত বলে লিখে শেষ করা যাবে না। তাঁর উপর হাজার হাজার বই পুস্তক, প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, হচ্ছে। বাংলার মাটি, আলো বাতাস যতদিন থাকবে তাঁর উপর গবেষণা প্রবন্ধ লেখালেখি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম লিখে যাবে। এতো বড় মাপের নেতার জন্ম দুনিয়াব্যাপী খুবই বিরল। শোকাবহ দিবসে তাঁর আত্মার প্রতি সমস্বরে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বলতে চাই তিনি “কেমন বাংলাদেশ” চেয়েছিলেন। আজকের বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ কী পার্থক্য হয়েছে, সেটিই বিশ্লেষণ দরকার।
শোষণ, নির্যাতন আর শোষিতের হাত থেকে এ জাতিকে রক্ষা করতেই বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ছিলো। ক্ষুধা দারিদ্রতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জন্ম। বঙ্গবন্ধু লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে এনে দিয়েছেন। একটি মানচিত্র দিয়ে গেছেন। একটি সংবিধান প্রতিষ্টা করে গেছেন। দেশ জাতি রাষ্ট্র কীভাবে স্বাধীন সার্বভৌম অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকবে সেটা তিনি শিক্ষা দিয়ে গেছেন। কৃষক থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে তিনি সব তৈরী করে দিয়ে গেছেন। তিনি ছিলেন গরীব দু:খী কৃষক ও মেহনতি মানুষের বন্ধু। তাঁর সব পরিকল্পনা কর্মসূচী ছিল সব মানুষের সুখ ও শান্তির জন্য। রাজা এবং প্রজা কীভাবে চলবে সবই ছিল তাঁর রাজনীতিতে। তিনি চিন্তা চেতনায় দেশ জাতির কল্যাণ ও মঙ্গলের কথা ভাবতেন। দেশের ক্ষমতা আর সম্পদ লুন্ঠন আর ভোগ করার বিন্দুমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। নিজ এবং পরিবারের জন্য তাঁর কোনো সঞ্চয় পাওয়া যায় নি। মহান এ নেতা সারাটি জীবন এ অঞ্চলের মানুষের সুখ শান্তির চিন্তা করেছেন। কিন্তু আজকে তাঁর প্রতিষ্টিত স্বাধীন পতাকা আর মানচিত্রে কী দেখছি?
লুটপাট দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করে দেশ থেকে পাচারের সংবাদ পাচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ থেকে আজ দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ অসৎ মানুষরা জনগণের সম্পদ রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটেপুটে খাচ্ছে। অপরদিকে যাদের জন্য বঙ্গবন্ধু দেশটিকে স্বাধীন করেছিলেন তারা এখনো নিষ্পেষিত ও ক্ষুধার্ত। এসব মানুষ এখনো মোটা চাল আর মাথা গোঁজাবার ঠাঁই খুঁজছে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ধনী গরিব ব্যবধান এখনো অনেক দূর। কেউ অট্টালিকা সম্পদের মালিক, কেউ ফুটপাতে ঠাঁই পাচ্ছে না। শিক্ষা, সংস্কৃতি চাকরী প্রাপ্তিতে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি অনিয়মে দেশ ছেয়ে গেছে।
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সুযোগ্য সুদক্ষ পরিকল্পনায় বাংলাদেশ বিশ্বের বুঁকে মাথা তুলে দাঁড়ালেও দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক সফলতা অর্জন করতে পারছে না। রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় আমলাদের দুর্নীতি দেশের উন্নয়নকে পিছনে নিয়ে যাচ্ছে। যাদের জন্য উন্নয়ন অগ্রগতি থাকার কথা ছিল তারা রাষ্ট্রীয় সফলতা পাচ্ছে না।
সব শ্রেণীর মানুষের মুখে হাসি ফুটানো ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দীতেও সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়াতে জাতীয় হতাশা দূর হয়নি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে এখনো ৭৫-এর ঘাতক ষড়যন্ত্রকারী নি:শেষ হয়নি। জাতি এবং দেশকে পিছনে নিয়ে যেতে তাদের ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। এ মহল দেশের অগ্রগতি সফলতা কোনো অবস্থায় সহ্য করবে না।
কুচক্রি মহল থেকে সর্বদা দেশপ্রেমিক জনতাকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের অব্যাহত সাফল্য এগিয়ে নিতে হবে। ৭৫-এর মতো আর যেনো কালো দিন বাংলার ইতিহাসে সৃষ্টি না হয়, ছাত্র যুবক দেশপ্রেমিক জনতাকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশকে জনগণবান্ধব করতে হবে। প্রশাসনকে জনস্বার্থে পরিচালিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সঠিক মমাত্ত্ববোধ দিয়ে জাতিকে পরিচালনা করতে হবে। লুটপাট দুর্নীতি জাতি বিধ্বংসী সব ধরনের ষড়যন্ত্র থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে হবে। বাঙালি জাতির সুখ শান্তি আর হাসি ফুটলেই বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে। মহান জাতির পিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি।
লেখক: মাহমুদুল হক আনসারী
গবেষক, প্রাবন্ধিক
ট্যাগ :
© 2016 - All Rights Reversed dailyctgnews
Web Developed by Ctgtimes (Pvt.) Limited