৭ই মার্চের ভাষণটি ছিলো যুদ্ধজয়ের মন্ত্রনা : মেয়র রেজাউল করিম
প্রকাশ: ২০২১-০৩-০৭ ১৫:৫৬:৫৯ || আপডেট: ২০২১-০৩-০৭ ১৫:৫৬:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ একটি শোষিত নির্যাতিত, অবদমিত ও নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিনত করে অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে মুক্তিযুদ্ধে উদ্দীপ্ত করেছিলো। তাঁর এই আঠারো মিনিটের ভাষণে প্রতিটি শব্দ ও বাক্য একটি পরিকল্পিত জনযুদ্ধের নির্দেশনা। তাই এ ভাষণটি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে আজ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশী সমাদৃত। আমরা যারা রণাঙ্গনে ছিলাম এবং অস্ত্র হাতে হানাদার বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি ছিলো আমাদের জন্য যুদ্ধজয়ের মন্ত্রনা।
রবিবার ৭ মার্চ সকালে থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম মিলনায়তনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতীয় দিবস পালনোপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ৭৫’র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এই ভাষণটি নিষিদ্ধ ছিলো। এমনকি বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করাটাও কঠিন ছিলো। দীর্ঘ একুশ বছর বাংলাদেশ পাকিস্তানী ভাবধারায় পরিচালিত হওয়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিসর্জন দেয়া হয়েছিলো।
তিনি ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে একটি কৌশলগত নির্দেশনা হিসেবে অভিহিত করে বলেন, অনেকেই এক সময় বলতেন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি কেন? এর উত্তর হল, বঙ্গবন্ধু একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তিনি যদি ৭ মার্চ সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা করতেন তাহলে পাকিস্তানীরা তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতো এবং ৭ মার্চ রেসকোর্সে পাকিস্তানী বাহিনী বোমা হামলা চালিয়ে ও ঢাকা নগরীকে ধ্বংসস্তূপে পরিনত করে লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করতো। কৌশলী বঙ্গবন্ধু তা বুঝতে পেরে তিনি ভাষণে বাঙালিদের আশা-আক্সক্ষাকা ও স্বপ্নের কথা এমনভাবে উপস্থাপন করেছিলেন যে, তিনি যুদ্ধ চান না, বাঙালির অধিকার চান এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর চান। তিনি তাঁর ভাষণে জনগণকে কোন ধরণের টেক্স দিতে নিষেধ করেছিলেন। সেনাবাহিনীর গুলিতে মানুষ হত্যার বিচার দাবী করেছিলেন। এছাড়া সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার দাবী জানিয়েছিলেন। তিনি তাঁর ভাষণটি শেষ করেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, বাক্য উচ্চারণ করে। তাহলে আমরা বলতে পারি এই ভাষণে বাকিটা আর কিইবা থাকতে পারে।
মেয়র আরো বলেন, ভারতের মহাত্মা গান্ধি, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ, আর্জেন্টিনার পেরন, কংঙ্গোর নক্রমা এবং আমেরিকার মার্টিন লুথার কিং স-স জাতীকে মুক্তি দিতে সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তারপরও তাঁরা পরিপূর্ণ সফল ছিলেন না। একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন পূরণে একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিনত করে মহানায়কের আসনে অলংকৃত হন। তাঁকে ইতিহাস তৈরী করেনি, তিনি ইতিহাস তৈরী করেছেন। এ কারণে বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব। তিনি পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক আমলে বাঙালির সংস্কৃতি, কৃষ্টি ধ্বংস করতে চেয়েছিলো। বাঙালিকে আরবী হরফে বাংলা লিখাতে চেষ্টা করা হয়েছিলো। রবীন্দ্র নাথকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। কিন্তু বাঙালি তা মেনে নিতে পারেনি। আমি মনে করি শেক্সপিয়র, মিল্টন, আল্লামা ইকবাল ও ওমর খৈয়াম বিশ্বসম্পদ, তেমনি রবীন্দ্র নাথও। তাদের নিয়ে যুগে যুগে গবেষণা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে।
তিনি জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, জয় বাংলা আওয়ামী লীগের স্লোগান নয়, ছাত্রলীগের নিউক্লিয়ার্স পন্থিদের স্লোগান। পরে এই স্লোগানটি বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন। এই স্লোগানের জনক বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এ কারণে মহান মুক্তিযুদ্ধে জয় বাংলা স্লোগান ছিলো প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ স্পন্দন ও দেশপ্রেমের অর্কেস্ট্রা।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বারটি বিদেশী ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এই ভাষণ গভীর আবেগপূর্ণ ও উপলব্ধিময় তাই এই ভাষণ নিয়ে গবেষণা করার প্রয়োজন আছে এবং শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন-পাঠ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। তিনি সিটি কর্পোরেশনের শিক্ষকদের এই ভাষণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে পঠন-পাঠন ও অধ্যয়ন চর্চা করার আহবান জানান।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, পুলক খাস্তগীর, চসিক ভারপ্রাপ্ত সচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, অতি. প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক খান, কর কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী।
আলোচনা সভার পূর্বে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের উপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয় এবং আলোচনা সভা শেষে উদ্দীপনা মূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত কিন্ডার গার্টেন স্কুলের অধ্যক্ষ ও বাচিক শিল্পী কংকন দাশ। ৭ মার্চ পালনোপলক্ষে সকালে চসিক প্রধান কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে দিবসটি যথাযথভাবে পালন করা হয়।
ট্যাগ :
© 2016 - All Rights Reversed dailyctgnews
Web Developed by Ctgtimes (Pvt.) Limited