মূল্যবোধের অবক্ষয় ও পারিবারিক সহিংসতা-খোলা কলম।
প্রকাশ: ২০১৭-১১-০৯ ০৬:৪৮:৫৭ || আপডেট: ২০১৭-১১-০৯ ০৭:১৬:৪৯

-কিরন শর্মা
কথায় কথায় খুন। একটু ঝগড়া বিবাদ হলে একে অপরের উপর হামলা-মামলা থেকে সরে এসে সরাসরি খুন করা হচ্ছে। শুধুমাত্র প্রতিপক্ষকে খুন করা হতো এতদিন। দু’একটা ঘটনা ঘটতো পরিবারের মধ্যে যা দেখা যেত মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে কিংবা নেশাগ্রস্থ হয়ে স্বজনদের খুন করার ঘটনা। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে পরিবারের ছোটখাট ঘটনা ঘটলেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এ প্রবণতা শহর ছাড়িয়ে গ্রামেরও চলে গেছে। শুধু আত্মহত্যা নয় হত্যার মত জগণ্য পশুভিত্তিক প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছ। স্বজনদের খুন করার বিষয়টি রাষ্ট্র ও সমাজকে ভাবিয়ে তুলেছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। আর্থিক দৈন্যতা, পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা, সন্দেহ প্রবণতা ভুল বোঝাবুঝির মধ্য দিয়েও স্বজনদের খুন করা হচ্ছে। কোন এক ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা বশত মানসিক চাপে মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা পশুভিত্তির উদয় হলে সে কারো দিকে তাকায় না।
দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়। পরে যখন বোঝেন তখন কিছুই করার থাকেনা। কর্মব্যস্ত মানুষ যখন অতিরিক্ত মাসসিক চাপে থাকেন তার উপর আর্থিক চাপে পড়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এ ধরণের দূর্ঘটনাগুলো হচ্ছে। দিনকে দিন বেড়ে চলছে এ অমানবিক প্রবণতা। মানুষ কেন যেন একে অপরের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। পৃথিবীর আদিম প্রবণতাও দেখা যায়, কোন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একে অপরকে হত্যাকরে ফেলতো। আদিমযুগে মানুষ তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ পরায়ন ছিল।সভ্যতার উষালগ্ন থেকে মানুষ আস্তে আস্তে সমাজ সভ্যতা ও শৃংখলায় চলে আসে মানুষ। রাষ্ট্র ও সমাজের অনুশাসন মানুষ মানুষত্বে দিকে ধাবিত হয়। সমাজ সংসার এবং পারিবারিক পরিজনের প্রতি দায়িত্ববোধ মানুষকে সখ্যভ্য কওে তুলেছে। পারিবারিক বন্ধন ও মায়ার জাল ছিন্ন করে মানুষ সেই আদিমবৃত্তির দিকে কি এগুচ্ছে ? আজকে কথায় বথায় স্বামী-স্ত্রীকে , স্ত্রী-স্বামীকে, পিতা -পুত্রকে, পুত্র -পিতাকে, ভাই- ভাইকে, বোন-ভাইকে, পুত্র- মাকে, মা- পুত্রকে এভাবে স্বজনরা একে অপরকে খুন করছে। একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে, হামলা করছে। অর্থ সম্পদের লোভ, পূর্ব শত্রুতা এবং একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্তা হারিয়ে ফেলেছে মানুষ। সন্দেহ প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। এই বুঝি আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করছে। আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। আমার ক্ষতি করছে এমনকি করবে। এ রকম সন্দেহের বশেও একে অপরের প্রতি শত্রুতা বেড়ে যাচ্ছে। সভ্যতার এ যুগে এসে মানুষ আবার সেই আদিম প্রবৃতিকে ধারণ করে স্বজনদের পর্যন্ত খুন করছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাউজানে মায়ের সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে দুই ভাইয়ের হাতে খুন হন আরেক ভাই। রাজধানী ঢাকার কাকরাইলে দাম্পত্য কলহ ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে স্ত্রী শামসুন নাহারকে হত্যা করে তার স্বামী ও তার তৃতীয় স্ত্রী। বাড্ডায় পরকীয়ার বলি হয় স্বামী ও সন্তান।
গত বছরও চট্টগ্রামের রাউজানে স্ত্রী স্বামীকে খুন করে মাটি চাপা দিয়ে তার উপর চুলা বানিয়ে রান্না করেছিল। ১০ দিন পর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। একই কায়দায় সাতক্ষীরায় স্ত্রী স্বামীকে খুন করে। দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্ত্রীর হাতে খুন হন ঢাকার কল্যাণপুরের মুরগী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। পরে তার লাশ ওয়ারড্রপে ঠান্ডা মাথায় ঢুকিয়ে রাখা হয়।রাঙ্গুনিয়ার গুচ্ছ গ্রাম এলাকায় তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে জামাইয়ের হাতে খুন হন আয়েশা খাতুন। চট্টগ্রাম নগরীর মাদার বাড়ীতে স্বামীর হাতে গার্মেন্টস কর্মী আখি আক্তার খুন হয়েছে। সিইপিজেড কলসী দিঘীর পাড় এলাকায় স্বামীর হাতে খুন হন রীনা।
এভাবে একের পর এক স্বজন হত্যার সংবাদ বিভিন্ন গণ মাধ্যমে প্রকাশের পর সামাজিক ও পারিবারিক শংকা নিয়ে মানুষ রাত্রি যাপন করেছে। সমাজ সংসারে কতনা ঘটনা ঘটে। ভুল বোঝাবুঝি চিরকাল থাকেনা আবার তা ঠিক হয়ে যায় । আর এ প্রবণতা যদি বাড়তে থাকে তাহলে আগামী দিনে মানুষের গন্তব্যতো সেই আদিম যুগের হানানানি, মারামারি, কাটাকাটি, রাহাজানির দিকে এগোচ্ছে মানুষ। সমাজ বিজ্ঞানীরা বিষয়টি এরই মধ্যে অনুধাবন করেছেন। হতাশা, মানসিক বিষন্নতা, আর্থিক দৈন্যতা, যৌতুক, পরকীয়া, দাম্পত্য সমস্যা, পারিবারিককলহ, জমিজমা বিরোধসহ নানাবিধ কারণে পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে চলেছে। এর ফলে একের পর এক ঘটেছে আত্মাহত্যার মত নৃশংস ঘটনা। নৈতিক শিক্ষা ও মল্যবোধের বোধের অভাবে মানুষ সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন থেকে বেরিয়ে সহিংসতার দিকে এগুচ্ছে। এর থেকে পরিত্রান পেতে একে অপররের প্রতি সৌহাদ্যপূর্ণ আচরণ করতে হবে। মূল্য বোধ জাগ্রত করতে হবে। পারিবকারিক যোগাযোগ বাড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে হয়তো আগামী দিনে পারিবারকি সহিংসতা কমে প্রতিষ্ঠিত হবে পারিবারিক শান্তি।
লেখক- সাংবাদিক
ট্যাগ :
© 2016 - All Rights Reversed dailyctgnews
Web Developed by Ctgtimes (Pvt.) Limited