কেমন ঈদ চায়
প্রকাশ: ২০১৯-০৬-০১ ১২:৪৮:৫৮ || আপডেট: ২০১৯-০৬-০১ ১২:৪৮:৫৮

মাহমুদুল হক আনসারী: ঈদ আসে, ঈদ যায় সবার নিকট খুশি থাকে না। ঈদ কারো কাছে খুশি আবার অনেকের নিকট বিরহ বেদনা। মুসলমানদের কাছে রমজানের শেষে যে ঈদ আসে সেটা সর্ব বৃহৎ খুশির ঈদ। এক মাস সিয়াম বা রোজা যারা তাকওয়া নিষ্টার সাথে আল্লাহর একমাত্র সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে পালন করে তাদের জন্যেই মূলত ঈদের খুশি।
একজন ঈমানদার মুসলমান রোজা পালনের মাধ্যমে মানবতার ইন্দ্রিয় রিপুকে সংযম ও আত্মশুদ্ধি ঘটাতে পারলেই প্রকৃতভাবে ওই মুসলমান তাকওয়া অর্জনে সক্ষম হয়। রমজান আর রোজার মূখ্য উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। যারাই এ কাজ সঠিকভাবে আনজাম দিতে সক্ষম হয় তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে মহান ও সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার পাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পুরষ্কার সেটা এখানে মূখ্য উদ্দেশ্য নয়। তাকওয়া অর্জনই হলো একজন মুমিনের অন্যতম উদ্দেশ্য। এ তাকওয়া অর্জনের মধ্যে মুমিনের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত অসংখ্য নেয়ামত প্রাপ্তির ঘোষণা রয়েছে।
কথা হচ্ছে ঈদের আনন্দ আর কেমন হবে ঈদ এ নিয়ে। ঈদ আসে, ঈদ যায় কারা ঈদের আনন্দ উপভোগ করে আর কারা ঈদের দিনে আনন্দের পরিবর্তে ব্যাথা আর বিরহের সাগরে অশ্রুজল ভাসিয়ে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি করে তাদের কথা কেউ কি ভাবে?
দেশে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ অন্যায় ব্যাভিচার জুুলুমের শিকার হয়ে কারাভোগ করছে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অথবা যেকোনো অন্যায় জুলুমের পরিণতির কারণে বিনা বিচারে কারাভোগ করছে বছরের পর বছর। তাদের পরিবার পরিজন আত্মীয় প্রতিবেশীদের মাঝে বাস্তবে ঈদের দিন সে সময় আর আনন্দ খুশি থাকে না। বাংলাদেশের কারাগারে হাজার হাজার নির্যাতিত নিষ্পেষিত মিথ্যা মামলার শিকার অসংখ্য মানুষের কান্নার চিৎকার শুনতে পাওয়া যায়। ওইসব মানুষের পরিবারের নিকট কে দেবে খুশির আনন্দ? পারবে না কেউ তাদের অন্যায় আর জুলুমের শাস্তি থেকে মুক্তি দিতে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ধর্মীয় হানাহানি, সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নির্যাতিত এসব মানুষের কারণে ঈদের আনন্দ বাস্তবে অনেকের কাছে আর আনন্দ থাকে না। তাই আনন্দকে সার্বজনীন করতে হলে সমাজ হতে হিংসা, বিদ্বেষ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, মিথ্যা মামলা, হয়রানি বন্ধ করা চায়। রাষ্ট্রের সব মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা, ভালোবাসা, পরমতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা চায়।
গণতান্ত্রিক রীতিনীতির অনুশীলন আর চর্চা রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি পরিবেশ সঠিকভাবে সমাজে বিরাজ না করলে সেখানে ঈদ বা খুশি মনের আনন্দ সুখ শান্তি বাস্তবে কিছুই থাকে না। তাই যেকোনো ধর্মীয় অথবা পারিবারিক, সামাজিক খুশি আনন্দের মধ্যে মানুষের মানসিক ও আন্তরিক খুশি থাকতে হবে। মনে হয় সমাজে এখন ঈদের আনন্দের সাথে বিশাল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে আন্তরিক ও মানসিক আনন্দ খোঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক হানাহানি আর বৈষম্যেও কারণে খুশি অনেকের কাছে সোনার হরিণ। বিশাল শ্রম শ্রেণী আর পেশার মানুষ তাদের বেঁচে থাকার দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমে অবরোধ আর ধর্র্মঘট করছে। কৃষকের দেশ বাংলাদেশ হলেও কৃষকেরা তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। একশ্রেণীর ধনী গোষ্ঠী দেশের অর্থনীতিকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। বিশাল শ্রেণীপেশার মানুষ পদে পদে তাদের হাতে জিম্মি। কৃষক যা কিছু আয় করে তা দিয়ে তার সংসার চলে না। তাদের সন্তানদের ভরণপোষণ তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না। সরকারি কর্মচারিদের দফায় দফায় বেতনভাতা বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনিয়ন্ত্রিত পণ্যমূল্যের বাজারে কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। দেশের কোনো বাজারকে রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না।
সামাজিক অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে। এসব কারণে ঈদকে সার্বজনীন আনন্দ হিসেবে গ্রহণ করা অথবা বাস্তবায়ন মোটেই সম্ভব হচ্ছে না। অর্থ কতিপয় মানুষের নিকট জিম্মি। আর পুরো সমাজ স্বল্প সংখ্যক ওইসব ধনী শ্রেণীর নিকট শোষণের হাতিয়ার। তাই সব ধরনের ঈদ আর খুশি সার্বজনীন করতে হলে শোষণের জিঞ্জির ভাঙতে হবে। তবেই ঈদ ধনী গরীব সকলের নিকট খুশি হিসেবে আনন্দ দিতে পারে। সব ধরনের জুলুম নির্যাতন রাজনৈতিক সন্ত্রাস মামলা হামলা থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে হবে। ঈদের আনন্দ যেন জাতি হিসেবে সকলেই সমানভাবে উপভোগ করতে পারে সেটাই রাষ্ট্রের শাসকদের দেখা দরকার।
ট্যাগ :
© 2016 - All Rights Reversed dailyctgnews
Web Developed by Ctgtimes (Pvt.) Limited